আস্সালামু আলাইকুম। আসা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। আজ একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো, আর সেই বিষয়টি হচ্ছে ””অরগাজম””।
আলোচনা শুরু করার আগে কিছু কথা বলি। দয়া করে বেয়াদোবি ক্ষমা করবেন এবং কেউ এই বিষয়টাকে নেগেটিভলি নিবেন না এবং নেগেটিভ ভাববেন না। একজন মানুষ হিসাবে এই বিষয় টা সবার জানা উচিৎ বলে আমি মনে করি। তাই আমি অনেক আগে থেকে ভাবতাম যে, এই বিষয় টা নিয়ে বিস্তারিত লিখবো। কিন্তু আমি আসলে সাহস করে উঠতে পারছিলাম না। ভয় হতো, লোকে কি বলবে! কে কি ভাববে! অনেকে হয়তো এর পর আমাকে ”খারাপ মানুষ” বা “বাজে ছেলে” এসব উপাধীতেও ভূষিত করতে পারে। এর পর নিজের সাথে একরকম যুদ্ধ করে ডিসিশন নিয়েই ফেললাম যে আমি এটা লিখব। কে কি ভাবলো না ভাবলো তাতে আমার কি আসে যায়। কারন আমার উদ্দেশ্য টা তো সৎ।
আর হ্যা আরও একটি কথা শুরু থেকে শেষ অব্দি পড়ার অনুরোধ রইলো। পুরোটা না পড়লে আপনি বাপার টা ঠিক ক্লিয়ারভাবে বুঝে উঠতে পারবেন না। প্লিজ কেউ বাজে কমেন্ট করবেন না ।
”অরগাজম”
কি অবাক হচ্ছেন? এই শব্দটি প্রথম শুনছেন? হতে পারে আজই আপনি প্রথম বার শুনলেন। অনেকে হয়তো এর আগেও কোথাও শুনেছেন। কেউ হয়তো এই সম্পর্কে কিছু জানেন আবার কেউ শুধু শব্দটি ই শুনেছেন।
অরগাজম/ আরগাজম কি? এটুকু বলতে পারি, এটি রকেট সায়েন্স না হলেও সায়েন্স বটে!
আসুন তাহলে যেনে নিই এই অরগাজম সম্পর্কে বিস্তারিতঃ
যৌন মিলনের শেষ পর্যায় হচ্ছে অরগাজম বা চরম তৃপ্তি। সেক্সের চরম মুহূর্ত বা চলতি
ভাষায় 'ক্লাইম্যাক্স' নামে পরিচিত অরগ্যাজম। অনেকেরই ধারণা, এই অনুভূতি শুধু
মহিলাদের হয়। তবে তা নয়, অরগ্যাজমের কোনও লিঙ্গ-ভেদ নেই। যৌনমিলনের সময় চরম
শারীরিক ও মানসিক আনন্দের থেকে সেক্সুয়াল স্টিমুলেশন হয়। এই সময় শরীর থেকে এন্ডোরফিন্স
নামের একটি হরমোন নিঃসৃত হয়। এই সময়কেই অরগ্যাজম বলা হয়।
তবে নারীদের জন্য অরগাজম একেবারেই অন্য রকম একটা অনুভব। আপনার পরিচিত অন্য কোন অনুভবের সাথে এটার মিল খুঁজে পাবেন না। হ্যাঁ, এ কথা সত্যি যে আমাদের দেশে বিপুল সংখ্যক নারীর অরগাজমের সাথে পরিচয় নেই। এমনকি তাঁরা জানেন পর্যন্ত না অরগাজমের ব্যাপারে। এক অনলাইন প্রতিবেদন এ পড়েছিলাম যে, ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় ৭০% নারী এটা সম্পর্কে জানেন না। এমনকি আমি নিজেই একটা এক্সপেরিমেন্ট চালিয়েছিলাম আমার আশেপাশের বন্ধুদের উপর এবং দেখতে পেলাম যে, তাদের প্রায় ৭৫% ই নারীর অরগাজম সম্পর্কে কিছুই জানে না এবং মাত্র ২০% অল্প একটু জানেন বলে মনে হচ্ছিলো তাও আবার সম্পূর্ন টা না।
এর কারণ বিশ্লেষন করলে দেখা যায় যে, পুরুষের চাইতে নারীর অরগাজমটা একটু ভিন্ন। পুরুষের অরগাজম যত সহজে আসে, নারীর ক্ষেত্রে তেমনটা হয় না। নারীর অরগাজমে সময় ও যৌন মিলনের সঠিক পজিশন প্রয়োজন। পুরুষ যেমন বীর্যপাতের কয়েক মুহূর্ত আগে টের পান, নারীর ক্ষেত্রেও তাই। যৌন মিলনের সময় অরগাজম হবার কয়েক মুহূর্ত আগেই বুঝতে পারবেন যে চরম মুহূর্ত উপস্থিত হতে যাচ্ছে। আপনার হার্ট বিট বেড়ে যেতে শুরু করবে, মুখে রক্ত জমবে, নিঃশ্বাস ভারী হয়ে যাবে, কেউ কেউ ঘামতেও শুরু করবেন। তবে সবচাইতে নিশ্চিত ব্যাপারটি হচ্ছে নিজের যোনিতে এমন একটা উত্তেজনাময় অনুভব তৈরি হবে যেটা আগে কখনো অনুভব করেননি। এক রকমের অসহ্য আনন্দ। বলা হয়ে থাকে যে, পৃথীবিতে নারীদের সবচেয়ে মুহুর্তি এটিই। কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী এই অনুভবের পর ভীষণ ক্লান্তি অনুভব করবেন আর যোনির পিচ্ছিল ভাব কমে গিয়ে যোনি শুকিয়ে আসবে। পিপাসা বোধ করতে পারেন, ক্লান্তিতে ঘুম আসবে, হুট করেই যৌন মিলনের আগ্রহ হারিয়ে যাবে, শরীর কাঁপতে পারে আবেশে, যোনির ভেতরে কম্পন অনুভূত হতে পারে।
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অরগ্যাজম হলেও প্রকৃত অর্থে বীর্য বেরিয়ে যাওয়া মানেই অরগ্যাজম নয়। পুরুষদের মধ্যে কারোর কারোর শীঘ্র-পতনের সমস্যা থাকে। তবে বীর্যপাত হলেই অরগ্যাজম হয়েছে এটা ভাবা ভুল। অর্থাৎ, তা চরম সুখ নাও হতে পারে।
পুরুষদের থেকে মহিলাদের অরগ্যাজমে সময় বেশি লাগে(পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪-৮ মিনিট এবং মিহিলাদের ক্ষেত্রে ১৫-৩০ মিনিট)। চূড়ান্ত উত্তেজনায় পৌঁছতে নারীর ক্ষেত্রে শারীরিকের পাশাপাশি মানসিক আনন্দও অত্যন্ত জরুরি। তাই দীর্ঘ সময় অরগ্যাজম না হলে মহিলাদের মধ্যে অ্যানঅরগ্যাজমিয়া নামক মানসিক সমস্যা দেখা যায়। গবেষকদের মতে, বিশ্বে প্রতি ১০০ মহিলার মধ্যে ১৫ জনই এই রোগে ভোগেন। মেয়েদের ক্ষেত্রে অরগ্যাজম বিষয়টি অত্যন্ত লক্ষণীয়। কারণ বিবিধ কারণে তারা অরগ্যাজম লুকিয়ে যায় বলে চলতি ধারণা রয়েছে। তবে এর পিছনে কারণ জানলে ধারণায় পরিবর্তন আসতে বাধ্য।
যৌনতার সময় নিজেদের ভালো লাগা বা খারাপ লাগা নিয়ে অনেকেই আলোচনা
করে না। তাই অনেকের ক্ষেত্রেই যৌনমিলন যান্ত্রিক হয়ে উঠেছে। সেক্ষেত্রে অনেকেই সঙ্গীর
চাপাচাপি থেকে বাঁচতে অরগ্যাজমে পৌঁছানোর ভান করে।
এছাড়াও, যাঁদের যোনিপথ তুলনায় শুকনো থাকে, তাঁদের সেক্সে বেদনা বেশি। এমন অনেকেই ব্যথা
থেকে বাঁচতে অরগ্যাজমের ভান করেন।
মনে রাখুন!
বিশেষজ্ঞদের মতে, যৌনমিলনের সময় তাই পার্টনারের ভালো লাগার কথাও ভাবা উচিত। জড়তা কাটিয়ে, সংকোচ এড়িয়ে মুক্ত মনের মিলনেই চরম আনন্দ।
এই তথ্যটি হয়তো অনেকেই জানেন যে, একজন পুরুষের শারীরিক মিলনের সময়ে অর্গাজমে পৌঁছতে যতটা সময় লাগে তার চেয়ে বেশ অনেকক্ষণ পর একজন মহিলা সেই চরমসীমায় পৌঁছন (পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪-৮ মিনিট এবং মিহিলাদের ক্ষেত্রে ১৫-৩০ মিনিট)। আসলে মহিলাদের যৌনাঙ্গ পুরুষদের যৌনাঙ্গের তুলনায় অনেক বেশি জটিল, ফলে অর্গাজমে পৌঁছতে মহিলাদের সময় অনেক বেশি লাগে। এছাড়া আরও অনেকগুলো ব্যাপার এখানে কাজ করে, কিছু মহিলা তাঁদের ‘জি-স্পট’-এ স্পর্শ করলেই উত্তেজিত হয়ে যান। আবার কেউ লজ্জা এত বেশি পান যে, অর্গাজমে পৌঁছতেই পারেন না।
মহিলাদের অর্গাজম পুরুষদের তুলনায় দেরিতে হলেও তার রেশ কিন্তু বেশ অনেকক্ষণ থাকে। সাধারণত অর্গাজমের অনুভূতি পুরুষদের মধ্যে সাত সেকেন্ড পর্যন্ত থাকে, সেখানেই মহিলাদের এই সুখানুভূতি ২৭ সেকেন্ডের বেশি সময় পর্যন্ত বজায় থাকে। আর মহিলাদের তো একবার না, বারবার অর্গাজম হতে পারে!
অনেকেই ইজাকুলেশন এবং অর্গাজমের মধ্যে তফাত বুঝতে পারেন না। অর্গাজম হলেই যে ইজাকুলেশন হবে তার কোনও মানে নেই কিন্তু! কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে তাঁরা অর্গাজমে পৌঁছলে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেন না, তাঁদের ইজাকুলেশন হবেই! হবেই! অনেক পুরুষ আবার একবার মাত্র ইজাকুলেট করেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং ঘুমিয়েও পড়েন!
স্কোয়ারটিং? সে আবার কী? খায় না মাথায় দেয়! এসব প্রশ্ন যদি আপনার মাথায় ঘোরে এই মুহূর্তে তা হলে বলে রাখি, স্কোয়ারটিং হল সেই অনুভূতি যা আপনাকে অর্গাজমে পৌঁছতে সাহায্য করে। অনেকেই আবার স্কোয়ারটিংকে অর্গাজম বলে ভুল করে ফেলেন। তবে সব মহিলার কিন্তু স্কোয়ারটিং হয় না। স্কোয়ারটিং-এর জন্য আপনার সঙ্গীকে ঠিক পয়েন্টে আপনাকে ছুঁতে হবে এবং আপনি সম্পূর্ণভাবে তৃপ্ত হলে তবেই আপনার স্কোয়ারটিং হবে! তবে হ্যাঁ, মনে রাখবেন স্কোয়ারটিং, অর্গাজম এবং ইজাকুলেশন কিন্তু এক ব্যাপার নয়!
নাগরিক জীবনের ব্যস্ততায় শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যায় আক্রান্ত
হতে হয় প্রায় সবাইকেই। এ ধরনের সমস্যাগুলো কমাতে ভূমিকা রাখে অর্গাজম। সুস্বাস্থ্যের
জন্য অর্গাজমের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
অনেকেই যৌনতার সঙ্গে অর্গাজমকে মিলিয়ে ফেলেন। যদিও যৌনতা মানেই অর্গাজম নয়। যৌনতার
চূড়ান্ত একটি পর্যায় হলো অর্গাজম। আর এ পর্যায়টিতে অনেকেই পৌঁছাতে পারেন না সঠিকভাবে
না জানার কারণে। অর্গাজমের কিছু উপকারিতার কথা তুলে ধরা হলো এ লেখায়। এক প্রতিবেদনে
বিষয়টি জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
১. মানসিক তৃপ্তি
মানসিক প্রশান্তির জন্য অর্গাজমের তুলনা হয় না। মজাদার খাবার, দামি কিংবা মনোরম উপহার
ইত্যাদির তুলনায় মানসিক তৃপ্তি দিতে পারে একটি পরিপূর্ণ অর্গাজম।
২. ভালো ঘুম
অর্গাজমের ভালো ঘুম আনতে সহায়তা করে। অর্গাজমের কারণে দেহের মাংসপেশিগুলো শিথিল হয়
এবং দেহ সহজেই ঘুমের জন্য প্রস্তুত হয়। এছাড়া ঘুম গাঢ় করতেও সহায়তা করে অর্গাজম।
৩. দেহ পরিষ্কার
অর্গাজম কোনো পানি কিংবা সাবান ছাড়াই দেহের ভেতর পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। এটি মূলত
দেহের ভেতরের রক্তচলাচল বাড়ায় ও অঙ্গগুলোর কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। এতে দেহে জমা হওয়া
নানা দূষিত উপাদান পরিশোধন হয়ে যায়।
৪. সৃজনশীলতা বৃদ্ধি
অর্গাজমের পর বহু কবি ও শিল্পীর সৃজনশীলতা বাড়ে। বিশ্বের বহু বিখ্যাত শিল্পী এ কথা
স্বীকার করেছেন।
৫. যন্ত্রণা লাঘবে
দেহের যন্ত্রণা কমাতে সহায়তা করে অর্গাজম। নারীদের ব্যাক পেইনসহ দেহের নানা ধরনের যন্ত্রণা
কমাতে এটা সহায়ক।
৬. মন ভালো করতে
অর্গাজমে বাজে মুড ভালো হয়ে যায়। অনেক দম্পতিই জানিয়েছেন, অর্গাজমের পর তাদের মানসিক
অবস্থা ভালো হয়।
৭. মানসিক চাপ কমাতে
ব্যস্ত জীবনে মানসিক চাপ ক্রমাগত অসুস্থ করে দেয় আমাদের। আর এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে
সহায়তা করে অর্গাজম। এটি দুশ্চিন্তা দূরে সরিয়ে মনকে ফ্রেশ হতে সহায়তা করে।
৮. শারীরিক সুস্থতায়
সুস্থ থাকার জন্য দৈনিক শারীরিক পরিশ্রম করা প্রয়োজন। শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে ক্যালরি
ক্ষয় করে দেহকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে অর্গাজম।
৯. রাগ কমাতে
রাগ কমাতে সহায়তা করে অর্গাজম। বহু মানুষই জানিয়েছেন অর্গাজমের পর তাদের মন প্রশান্ত
থাকে এবং রাগের প্রবণতা কমে যায়।
চরম সুখে সামিল দু’পক্ষই। তবে সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, যৌনমিলনের হার বাড়লেও চরম শারীরিক সুখ বা অর্গাজমের হারে সন্তুষ্ট নয় অধিকাংশ নারীই। কন্ডোম প্রস্তুতকারক ব্র্যান্ড ডিউরেক্স -এর এক সমীক্ষা অনুযায়ী ৭০% নারী সেক্সে চরম সুখ থেকে বঞ্চিত থাকেন। অর্থাৎ, তাদের অর্গাজম হয় না। এর কারন এদের মধ্যে বেশিরভাগ নারীর এই সম্পর্কে কোন রকম ধারনা নেই। এবং যারা জানেন তারা বিভিন্ন কারনে সেটা তাদের সঙ্গির কাছে বলতে পারে না। অনেক পুরুষ আবার তাদের সঙ্গিনীকে এই ব্যাপারে সাহায্য করে না। যার ফলে নারীরা এই চরম সুখ থেকে বঞ্চিত থেকেই যায়।
আসুন আকটা গল্পের মাধ্যমে এটার গুরুত্ত্ব সম্পর্কে জেনে নিই:
নারীদের এই অর্গাজম প্রাপ্তির হারকে সামনে রেখেই লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে আলোচনা নতুন মাত্রা পেয়েছে।বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন বলে মনে করেছেন অনেকেই।
কিন্তু, যৌন সুখের চরম প্রাপ্তি থেকে নারীদের বঞ্চিত হওয়ার কারণ কী? ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে, সামাজিক প্রেক্ষাপটে যৌনতার ফ্রেমই এর জন্য দায়ী। আসলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে যৌনতাও পুরুষতান্ত্রিক নিগড়ে বাধা। পুরুষদের যৌনতা সাধারণত লিঙ্গকেন্দ্রীক। অর্থাৎ, একটি অর্গাজমে তাদের যৌনতা শেষ হয়। তবে নারীর যৌনতা শুধুই যোনিকেন্দ্রীক নয়। তাই চরম মুহূর্তে পৌঁছতে তাদের তুলনায় বেশি সময় লাগে।
সাধারণত, উৎপাদনকামী যৌনতার ঝোঁক বেশি হয় পুরুষদের মধ্যে। এছাড়াও প্রকৃত যৌনশিক্ষার অভাব, সঙ্গমের সময় তাড়াহুড়ো করা ইত্যাদি কারণে পার্টনারকে সুখী করতে ব্যর্থ হন তারা।












0 Comments:
Post a Comment